,

৫৬ দিন পর স্কুলছাত্রের মরদেহ উত্তোলন, আসামি প্রধান শিক্ষক

জেলা প্রতিনিধি, নওগাঁ:  নওগাঁ সদর উপজেলার কীর্ত্তিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সিফাত হোসেনের মরদেহ দাফনের ৫৬ দিন পর আদালতের নির্দেশে কবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে।

বুধবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে পারিবারিক কবরস্থান থেকে সিফাতের মরদেহ তোলার পর সুরতহাল প্রতিবেদন করে ময়নাতদন্তের জন্য নওগাঁ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।

এ সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইকবাল হোসাইন, সদর থানার ওসি (অপারেশন) আব্দুল গফুর এবং সিফাতের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে সিফাতের মৃত্যুর ঘটনায় তার বাবার করা মামলার সূত্র ধরে মরদেহ উত্তোলনের নির্দেশ দেয় আদালত।

অভিযোগ ছিল, গত ৩১ মে সকালে স্কুলের অ্যাসেম্বলিতে দাঁড়ানোকে কেন্দ্র করে কীর্ত্তিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী সিফাত হোসেনকে নবম শ্রেণির স্মরণ শাহরিয়ার, হৃতিক ও রিয়াদ হোসেন মারধর করে। ঘটনাটি পরিবারকে জানালে ওই দিনই সিফাতের বাবা মিজানুর রহমান প্রধান শিক্ষক আজহারুল ইসলামের কাছে অভিযোগ করেন।

কিন্তু প্রধান শিক্ষক বিষয়টিতে গুরুত্ব না দিয়ে উল্টো সিফাতকেও মারপিট করতে বলেন। তা না হলে মিজানুরকে হাতে মেয়েদের চুড়ি পরে থাকতে বলেন।

এ ছাড়া প্রধান শিক্ষকের কাছে অভিযোগ করায় বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত স্মরণ শাহরিয়ারের বাবা সাজেদুর রহমান সিফাতকে অকথ্য গালিগালাজ করে টিসি দেয়ারও হুমকি দেন।

এ সময় বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সুবল চন্দ্র ও নজরুল ইসলামও সিফাতকে নিয়ে হাসাহাসি করেন।

বিচার না পেয়ে মনোকষ্ট নিয়ে বাড়ি ফিরে ওই দিন রাতেই গ্যাস বড়ি (কীটনাশক) খায় সিফাত। পরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় প্রথমে তাকে নওগাঁ সদর হাসপাতাল ও পরে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন দুপুরে তার মৃত্যু হয়।

ঘটনার পর নওগাঁর আমলি আদালত-১-এ গত ৯ জুন মামলা গ্রহণের আর্জি জানান সিফাতের বাবা মিজানুর রহমান। পরে আদালতের নির্দেশে আত্মহত্যার প্ররোচনা ও সহায়তার অভিযোগে স্কুলের প্রধান শিক্ষক আজহারুল ইসলামসহ আটজনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরও চার-পাঁচজনকে আসামি করে মামলাটি গ্রহণ করে নওগাঁ সদর মডেল থানা পুলিশ।

সিফাতের বাবা মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমার ছেলেকে আত্মহত্যার প্ররোচনা দেয়া হয়েছে। অপমান সইতে না পেরে সে আত্মহত্যা করেছে। আমার করা মামলায় আদালতের নির্দেশে ময়নাতদন্তের জন্য ছেলের লাশ উত্তোলন করা হয়েছে। আমি জড়িতদের কঠিন শাস্তি চাই।’

নওগাঁ সদর মডেল থানার ওসি নজরুল ইসলাম জুয়েল মরদেহ উত্তোলনের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘সিফাতের বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে আদালতের নির্দেশে মরদেহ উত্তোলন করা হয়েছে। মরদেহ তুলে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। পরে ময়নাতদন্তের জন্য নওগাঁ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।’

এই বিভাগের আরও খবর